গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের সড়কে কোটালীপাড়ার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এসে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম পটু, বঙ্গবন্ধু চেতনা সৈনিক সংঘের সভাপতি দিদারুল ইসলাম খান, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রেজওয়ান মুন্সী, ব্যবসায়ী সঞ্জয় বিশ^াস, সেকেন্দার ফরাজী, এনামুল হক মোল্লা বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার সাড়ে ৩ লক্ষ জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় ৩জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছে। প্রতিদিন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আউটডোরে ৫’শ থেকে ৬ শত রোগী হয়। আউট ডোরে কোন দিন ১জন, কোন দিন ২ জন ডাক্তার থাকে। অনেক রোগীই সেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। যদি আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার দেওয়া না হয় তা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারদের ২১টি পদের অনুকুলে বর্তমানে এখানে মাত্র ৩জন ডাক্তার রয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডা. মো: শরাফাত হোসাইন (কোড-১১৩৬৪২), ডা. মো: আবু দাউদ খান মো: ইয়াহিয়া (কোড-৩৯৬৪৯), ডা. মো: রেজাউল করিম(কোড-১১৩৬৬৭) কে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করে।
অপরদিকে একই তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডা. মো: সাকীফ মাহরিয়ার (কোড-১৩০৮৩২), ডা. মোহাম্মদ আহাদ হোসেন (কোড- ১০০৪৮১৬), ডা. মো: আহসান কবির (কোড- ১৩৪৫৩৫), ডা. ছাইয়োদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ (কোড- ১০০৩৮৯২) কে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করে।
বদলিকৃত এই ৭ ডাক্তারকে সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখের মধ্যে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
কিন্তু এই ৭ ডাক্তারের মধ্যে শুরু মাত্র ডা. ছাইয়োদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেছে। বাকি ৬ ডাক্তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে অপেক্ষা করে এখনো কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত বৈদ্য বলেন, পদায়নকৃত ৭ ডাক্তারকে সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে এখানে যোগদান করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ ৭ ডাক্তারের মধ্যে শুধুমাত্র ডা. ছাইয়োদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ যোগদান করেছেন। বাকি ৬ ডাক্তার এখানে যোগদান করেনি। বিষয়টি আমি সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে লিখিত ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছি।
যোগদানকৃত ডাক্তার ডা. ছাইয়োদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করার পরে দেখলাম, প্রতিদিন এখানে আউট ডোরে ৫ থেকে ৬’শ রোগী হয়। আমরা যে কয়েকজন ডাক্তার এখানে আছে তাদের রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কেন এই ৬ ডাক্তার যোগদান করলেন না এ বিষয়ে জানার জন্য তাদের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
ডহরপাড়া গ্রামের মো: রফিকুর ইসলাম পটু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকায় বদলীকৃত ডাক্তাররা যোগদান করেননি। আমরা তাদের এই সাহসিকতায় হতাশ। এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ জনগনের বসবাস। এই বিপুল জনগণের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র ৩জন ডাক্তার। এখানে জরুরীভাবে ডাক্তার প্রয়োজন।
গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. তরুন মন্ডল বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোটালীপাড়ায় ডাক্তার দিচ্ছে। কিন্তু বদলিকৃত ডাক্তাররা এখানে যোগদান করছেন না। এ বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কথা বলেছি। আশা করি খুব শ্রীঘ্রই এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তারের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।